নির্বাচনের ট্রেনে বিএনপি উঠতে পারবে কি না তা শুধু ইসিই বলতে পারবে: ফারুক খান

আওয়ামী লগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাবেক বাণিজ্য এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনের ট্রেন মিস করেছে, এই ট্রেনে তাদের ওঠার কোন সুযোগ আর সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না, তবে পথিমধ্য থেকে কোন যাত্রীকে নেয়া যায় কি না তা নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসি বলতে পারবে। বাংলা আউটলুককে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বাংলা আউট লুক এর ঢাকা প্রতিনিধির নেয়া সাক্ষাৎকারটি নিচে দেয়া হলো।

বাংলা আউটলুক: কোন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিচ্ছে?

ফারুক খান: ধন্যবাদ, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে দেশের চলমান উন্নয়নের যে ধারা তা অব্যাহত রাখার আকাঙ্খা নিয়ে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের সে ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।  আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ অতীতের মত আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের চাকা চালু রাখবে।

বাংল আউটলুক: কিন্তু যে নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে, দেশের একটি প্রাচীন রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ তাকে কিভাবে দেখছে?

ফারুক খান: আওয়ামী লীগ মনে করে নির্বাচন হচ্ছে ক্ষমতায় আসার ও ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়ার একমাত্র পদ্ধতি। আমরা অপেক্ষায় আছি জনগণের বিপুল অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য।

বাংলা আউটলুক: বিগত দু’টি নির্বাচনের মতোই কি হতে যাচ্ছে এবারের নির্বাচনও?

ফারুক খান: বিগত দু’টি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। জনগণ ভোট দিয়েছে। ভোট বানচালের জন্য বিএনপি অনেক চেষ্টা করেছে, অনেক বাধা দিয়েছে, সে সব উপেক্ষা করে মানুষ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছে। দেখুন মানুষ উন্নতি চায়, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন চায়, তাই তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দিচ্ছে।

বাংলা আউটলুক: কিন্তু বাংলাদেশের প্রধান দু’টি দলের ভোটের তফাৎ এক বা দুই শতাংশ, সেখানে বিএনপি যে ভোট পেয়েছে তা খুবই কম। আপনি কি মনে করেন আওয়ামী লীগের তুলনায় বিএনপি এত কম ভোট পেতে পারে?

ফারুক খান: বিএনপির ভোট পাওয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে, তারা প্রায় সব আসনে দু’/তিন জন প্রার্থী দিয়েছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের জন্য তারা এটা করেছে, তাছাড়া মানুষ তাদের আগুন সন্ত্রাস, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, ভাঙচুর এসবের কথা মনে রেখেছে। এছাড়া দলটির কোন নেতৃত্ব নেই। বিজয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন? বিরোধীদলে গেলে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবে তা ষ্পষ্ট করেনি দলটি। তাই জনগণ তাদের ভোট দেয়নি।

বাংলা আউটলুক: কিন্তু একই ধরণের অভিযোগ তো আওয়ামী লীগে বিরুদ্ধেও আছে। তারাও তো ১৭৩ দিন হরতাল করেছে, লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ মারার অভিযোগও রয়েছে।

ফারুক খান: মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে উন্নয়নের জন্য। আমরা দেশে যে উন্নয়ন করেছি তার প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে। সে আস্থার কারণেই মানুষ বার বার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনছে।

বাংলা আউটলুক:  দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়াকে। সরকারের সাথে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও সরাসরি সংলাপ হয়েছে। তাহলে এবার সংলাপ বা আলোচনা হলো না কেন?

ফারুক খান: সংলাপ হয়নি, কারণ বিএনপি তো বলছে তারা এ সরকারকে মানে না, তারা এ সরকারের পদত্যাগ চায়, যারা সরকারকেই মানে না তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা বা সংলাপ কি করে হবে? সংলাপ হতে হবে নি:শর্ত। কিন্তু তারা সরকারের পদত্যাগের দাবি দিচ্ছে। যারা সরকারের পদত্যাগ চায় সরকার তাদের সাথে সংলাপ করবে?

বাংলা আউটলুক: কিন্তু সংলাপের জন্য সবশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র চিঠির জবাবে আওয়ামী লীগ জানিয়েছে সংলাপের মত সময় এখন আর নেই, এটা কি সংলাপে অস্বীকৃতি নয়?

ফারুক খান: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সব সময়  বলেছেন আমরা সংলাপ চাই, কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাওয়ার পর কোন ধরণের সংলাপ হতে পারে।  আমরা সব সময়ই  সংলাপের পক্ষে, কিন্তু সময় ও প্রেক্ষাপট ভাবতে হবে।

বাংলা আউটলুক: বিএনপির কি নির্বাচনের চলমান ট্রেনে ওঠার কোন সুযোগই নেই? মধ্যবর্তী স্টেশন থেকে আরোহী উঠানো যায় না?

ফারুক খান: আমি মনে করি বিএনপির চলমান নির্বাচনে আসার আর কোন সুযোগ নেই, তারপরও তারা চলতি ট্রেনে উঠতে পারবে কি না, সে ধরণের কোন সুযোগ আছে কি না তা বলতে পারবে নির্বাচন কমিশন।

বাংলা আউটলুক: একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে বিএনপির প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

ফারুক খান: বিএনপির প্রতি আমার পরামর্শ তারা যেন নিয়মাতান্ত্রিক রাজনীতি করে। বিএনপি মনে করে তারা একেবারে ক্ষমতায় চলে আসবে, তাদের এ ধারণা ঠিক নয়, জনগণ  তাদের কেন ভোট দেবে, আগে জনগণের কাছে তা ষ্পষ্ট করতে হবে। তাদের নির্বাচনে থাকতে হবে।

বাংলা আউটলুক: আপনাকে ধন্যবাদ।

ফারুক খান: ধন্যবাদ।