হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি: আমদানিতেই সমাধান

ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার দেওয়ার পরপরই দেশের বাজারে দাম বাড়তে থাকে এর। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১০০ টাকার বেশি দাম বাড়ে কেজিতে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ২২০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের কেজিও ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় ওঠে। কোনো কারণ ছাড়াই দাম বাড়ানো হলেও কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার চেয়ে আমদানিতে আগ্রহ সরকারের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাজারে আসতে শুরু করেছে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এক মাসের মধ্যে পুরোদমে বাজারে আসবে নতুন পেঁয়াজ। গত দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ থাকায় পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ব্যাংকগুলোতে নতুন কোনো ঋণপত্র ( এলসি) খুলতে পারেনি। ফলে আগের এলসিতেই বাজারে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ। তাই বাজারে পেঁয়াজের দাম  বেড়ে ২০০ টাকায় বিক্রি হওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই। 

গত বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) ভারতের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টায় আগামী মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির সরকার। তবে কোনো দেশের সরকারের অনুরোধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার রপ্তানির সুযোগ দিতে পারবে বলেও দেশটির ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) আদেশে জানানো হয়েছিল।

রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশে পেঁয়াজে দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে এক বৈঠকে বসে। এতে বলা হয়, ভারতের সাথে কোটা সুবিধায় আওতায় সাত লাখ টন পেঁয়াজ চেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব দুই দেশের ব্যবসায়ীদের চাহিদা ও যোগানের তারতম্য থাকায় বাস্তবায়ন করা যায়নি। 
বৈঠক সূত্র জানায়, ভারতের ডিজিএফটি আদেশে বলা হয়েছে, কোনো দেশের সরকারের অনুরোধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজ রপ্তানির সুযোগ নিতে পারবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কোটায় পেঁয়াজ আমদানির প্রস্তাব বাস্তবায়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে বলবে ।
বৈঠকে বলা হয়েছে, প্রতিবছর পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম শাস্তি দিয়ে থাকে সরকার। বৈঠকে দেশের অসাধু  পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্বে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হয় না। ফলে পেঁয়াজের দাম বাড়ে। দাম বাড়লেও সমস্যা হয় না তাদের।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ভ্যাট দিবসে সরকারি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো আর দেশে একদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম হঠাৎ করে বেড়ে গেলো! এটা ব্যবসায়ীদের দায়িত্বশীল আচরণ নয়।’

একদিনের ব্যবধানে দাম ৮০ টাকা বাড়ে কীভাবে- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘যিনি একদিন আগে ১২০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করলেন, পরদিন কীভাবে সেটার দাম ২০০ টাকা হয়ে গেল? দাম বাড়তে তো সময় লাগার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বাড়তি লাভের আশায় কোনো নৈতিকতা দেখালেন না।’

দাম নিয়ন্ত্রণে শনিবার দেশের ১৩৩টি জায়গায় অভিযানে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষাণ অধিদপ্তর। অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রির দায়ে ব্যবসায়ীদের ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা জরিমানা করা করেছে।

রাজধানীর মালিবাগ, শান্তি নগর, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী মোহাম্মদপুর, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক এলাকায় একেক দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। এলাকাভেদে দেশি পেঁয়াজের কেজি ২১০ টাকা থেকে ২২০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে মোট দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেছে। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে বাধ্য করা হয়েছে আগের দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে।