যে কারণে বিএনপির নেতাদের টলানো গেল না

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সরকারি চাপের কাছে নত হননি বিএনপি নেতারা। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনি দিয়ে হামলা চালিয়ে, গ্রেপ্তার-মামলা-সাজা দিয়ে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে, পরিবারের লোকজনের ওপর নির্যাতন করেও বিএনপি নেতাদের টলানো যায়নি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের কারণেই দলটির নেতাদের 'কিংস পার্টিতে' ভেড়ানো যায়নি বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।   

তারা বলছেন, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি করা হয় একের পর এক মামলা। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া প্রায় সব নেতাকে রিমান্ড দেয় আদালত। দেশজুড়ে অনেক নেতার বাসায় চালানো হয় অভিযান। নেতাকর্মীরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে অবস্থান নেন মাঠে, খোলা আকাশের নিচে। বিএনপিকে এ অবস্থায় রেখে ঘোষণা করা হয় জাতীয় নির্বাচনের তফসিল। নেতাদের নির্বাচনে নিতে টোপ, প্রলোভন দেখানোর তথ্যও আসে স্বজনদের কাছ থেকে। বিরোধী অনেক নেতা প্রকাশ্যেই জানিয়েছেন প্রলোভন দেওয়া হয়। প্রলোভন দেওয়া হয় কারাগারে থাকা নেতাদেরও। যার প্রমাণ হিসেবে দেখা যায়, ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিএনপির বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর। তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। 
তিনি এমন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন যাতে মির্জা ফখরুলসহ অন্য নেতারাও অভিযুক্ত। তবে শাহজাহান ওমর ছাড়া কেউ জামিন পাননি। তিনি এত দ্রুত জামিন পান ও মুক্ত হয়ে মনোনায়ন জমা দেন যা বিস্ময়কর। এতেই প্রমাণ, কারাগারে থাকা বিএনপি নেতাদের নানা ধরনের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। রাজনীতিক মহল বলছে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিএনপির  আন্দোলনে থাকা সমমনা শরিক দলগুলোর নেতাদেরও নানা টোপ দেয়া হয় নানা মাধ্যমে। ‘কিংস পার্টি’র বড় পদের লোভ দেখানো হয়। তবে চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি বিএনপি ও সমমনা জোটের শরিক দলের নেতারা।

আর এখানে কাজ করেছে তারেক রহমানের ক্যারিশমা।

জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে থাকলেও তারেক রহমানের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ মনিটরিং করেছেন বাইরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। বিভিন্ন সমস্যার সরাসরি সমাধান দিয়েছেন তিনি।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, সরকার যে চাপ দিয়ে বিএনপিকে ভাঙতে চায়, এ বিষয়টি তারেক রহমান আগেই বুঝতে পারেন। তিনি বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে আসছিলেন। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে বিএনপির ওপর সরকার ক্র্যাকডাউন চালালেও তারেক রহমানের দূরদর্শিতা ও নেতৃত্ব গুণে দলে ভাঙন ধরাতে সফল হয়নি তারা।

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলোর সঙ্গেও বিভিন্ন সময় কথা বলেন তারেক রহমান। সেসব দলও তারেক রহমানের ওপর আস্থা রেখেছেন। তাদেরও টলানো যায়নি। 

সূত্র জানায়, যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত কয়েকটি দলের প্রধানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তবে শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করেও তাদের নির্বাচনে আনা যায়নি। তারা বিএনপির নেতৃত্বে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে যুক্ত থেকেছেন। 

জ্যেষ্ঠ নেতারা কারাগারে গেলেও ২৮ অক্টোবরের পর থেকে প্রতিদিন ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন তারেক রহমান। তার বক্তব্য দলীয় নেতাকর্মীদের যেমন উজ্জীবিত করছে, তেমনি যুগপৎ আন্দোলনরত দলগুলোও আস্থা পাচ্ছে। 

রাজনীতিক মহল বলছে, আন্দোলন নিয়ে বিরোধী দলগুলো আত্মবিশ্বাসী। যে কারণে তারা সরকারের কোনো ফাঁদেই পা দিচ্ছে না। সরকারের পতন অনিবার্য বলেই মনে করছেন তারা। 

একই সঙ্গে প্রায় সব জ্যেষ্ঠ নেতা কারাগারে গেলেও তারেক রহমান যেভাবে 'নেতৃত্ব নিন ও নেতৃত্ব দিন' মন্ত্র দিয়ে নেতাকর্মীদের সক্রিয় রেখেছেন; তার প্রশংসা করছেন যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দলগুলো। 

তাদের মতে, প্রায় সব নেতা কারাগারে গেলেও ২৯ অক্টোবরের অভূতপূর্ব সফল হরতাল এবং টানা অবরোধ কর্মসূচিতে সাফল্য নির্ভর করছে ওই এক মন্ত্রে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নেতাকর্মীরা এক মন্ত্রেই সাহস ও শক্তি পাচ্ছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যা অভিনব।