বন্দীর মৃত্যু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় কারা কর্তৃপক্ষ: সাড়ে ৩৮ কোটি টাকার প্রস্তাব 

রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কারাগারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিনে বিএনপির তিন নেতার মৃত্যু হয়েছে কারাগারে। আর এ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে কারা কর্তৃপক্ষের। এ সমস্যার সমাধানে অবশ্য আগেই অ্যাম্বুলেন্স কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল তারা। তবে জানা গেছে, অর্থাভাবে অর্থ বিভাগ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে পারে।

জানা গেছে, কারাগারে রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা কয়েক গুন বেড়ে যাওয়ায় অতি দ্রুত চিকিৎসার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা অধিদপ্তর ৯১টি অ্যাম্বুলেস ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন কেনার অনুমোদন চেয়েছে।

‘অ্যাম্বুলেস, নিরাপত্তা সংক্রান্ত গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন সংগ্রহের মাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের সক্ষমতা বৃদ্বি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গাড়ি ও অ্যাম্বুলেস কেনা বাবদ সরকারের খরচ হবে ৩৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা । আর  গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে  নেয়া এ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৫৮৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।

অর্থ বিভাগের কাছে চিঠির মাধ্যমে কারা অধিদপ্তরের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স কেনার অনুমতি চাওয়া হয়েছে । চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব অঞ্জন কুমার সরকার ।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ অর্থ সংকটের কারণ দেখিয়ে কারা অধিদপ্তরের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ফাইল তৈরি করছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ডিবি পুলিশের নির্যাতনে এমনিতেই রাজনৈতিক বন্দীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই কারাগারে এরা অসুস্থ থাকছেন। এ কারণেই সম্প্রতি দেশের কারাগারগুলোতে রাজনৈতিক দলের তিন নেতাকর্মী বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন। এভাবে রাজনৈতিক বন্দী কারাগারে মারা গেলে কারা অধিদপ্তরের ওপর  মার্কিন যুক্তরাষ্টের আরেকটা নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র আশঙ্কা করছে।

সূত্র জানায়, কয়েকদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের প্রতিবেদনে পুলিশের কাউন্টার টেরারিজম ইউনিট আর সোয়াটের ওপর  মানবাধিকতার লংঘনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অন্যদিকে প্রায় তিন বছর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া  র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনো লক্ষণ আমরা দেখছি না।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, শুনেছি আমেরিকা আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝড়ের বেগে নিষেধাজ্ঞা আসছে। দেশের কারাগারে রাজনৈতিক কারণে আটক প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে যাওয়ায় কারা অধিদপ্তর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দেশের কারাগারগুলো ঢেলে সাজাতে চায় । এর জন্য অবশ্যই অসুস্থ কারাবন্দীর জন্য অ্যাম্বুলেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। অবশ্য দেশের বড় কারাগারগুলোতে হাসপাতাল ও চিকিৎসক পাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, রাজনৈতিক বন্দীদের চাপে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ঠাঁই নেই অবস্থা। তবু গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে বন্দীদের। প্রায় প্রতিদিন কয়েক শ আসামিকে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এতে ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বন্দী নিয়ে চলছে কেন্দ্রীয় কারাগারের কার্যক্রম। কেরাণীগঞ্জের কারাগারের বন্দী ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। অথচ সেখানে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৩১৫ জন বন্দী। এই হিসাবে ধারণক্ষমতার চেয়ে ৬ হাজার ৭২৫ জন অতিরিক্ত বন্দী আছে সেখানে। সর্বশেষ ১০ দিনে অন্তত ২ হাজার বন্দীর নতুন করে ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। বন্দীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কারাগার কর্তৃপক্ষকে।

বাংলাদেশ জেলের অধীনে বর্তমানে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। বাংলাদেশের কারাগারগুলোর ধারণক্ষমতা ৪২৪৫০ জন। ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ৮২৬৫৪ জন কারাবন্দী ছিল। বিএনপিসহ ৩৯ বিরোধী দলের ২৮ অক্টোবরের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলার পর বন্দীর সংখ্যা ১ লাখ ছড়িয়ে গেছে । বিএনপি দাবি করছে, এ সময়ে মোট রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে ।

এর আগে গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ডিসি-ইউএনওদের জন্য নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব স্থগিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। 

তিনি বলেন, ডিসি-ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব স্থগিত হয়েছে। কারণ সরকারকে মার্কিন ডলার দিয়ে গাড়ি কিনতে হয় ।

গত ১১ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ডিসি-ইউএনওদের জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তবে নীতিগত সম্মতি দেওয়া হয়। ২৬১টি গাড়ির প্রতিটির দাম ধরা হয় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে সরকারের ব্যয় হওয়ার কথা ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।