বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারের সব সুযোগ বন্ধ, চলছে দমনপীড়ন : সিভিকাস

বাংলাদেশে নাগরিক অধিকারের সব সুযোগ বন্ধ, চলছে দমনপীড়ন : সিভিকাস

বাংলাদেশে নাগরিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগ ‘ক্লোজড’ বা বন্ধ হয়ে গেছে। বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছে নাগরিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিভিকাস। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদলীয় নেতা ও নিরপেক্ষ সমালোচকদের বিরুদ্ধে সরকার বড়ধরনের দমনমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। এ অবস্থায় দেশটিতে নাগরিক অধিকার প্রয়োগের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, এই চরম অবনতিকর পরিস্থিতিকে সংস্থাটির মানদণ্ডে ‘ক্লোজড’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

‘পিপল পাওয়ার আন্ডার অ্যাটাক ২০২৩’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৯৮ টি দেশের নাগরিক অধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সিভিকাস।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়, জানুয়ারির নির্বাচনকে সামনে রেখে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করতে সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, প্রতিবাদকারী ও অন্য সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। তাদের দমনে ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। বানোয়াট অভিযোগে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

সিভিকাসের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল বিশেষজ্ঞ জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, ‘আমাদের তথ্য দেখাচ্ছে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিছুই পরোয়া করছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।’

সিভিকাস মনিটর প্রতিটি দেশকে তার নাগরিক সমাজের পরিস্থিতির ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে। এজন্য বছরজুড়ে দেশভিত্তিক নাগরিক সমাজের অধিকারকর্মী, অঞ্চলভিত্তিক গবেষণা দল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সূচকগুলো এবং মনিটরের নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। 

এই চারটি আলাদা উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত মিলিয়ে প্রতিটি দেশকে কয়েকটি শ্রেণিতে ফেলা হয়। এগুলো হলো- ওপেন (মুক্ত), ন্যারোড (সংকুচিত), অবস্ট্রাকটেড (বাধার সম্মুখীন) এবং রিপ্রেসড এবং ক্লোজড (নিষ্পেষণমূলক, বন্ধ হয়ে যাওয়া)।সবগুলো শ্রেণির মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বোঝানো হয় ‘ক্লোজড’ দিয়ে। এই শ্রেণিতে অবস্থান করায় এখন সিভিকাসের হিসাবে নাগরিক অধিকার খর্বকারী শীর্ষ ২৮ দেশের  তালিকায় আছে বাংলাদেশও। 

সিভিকাস আরও বলছে, বিরোধীদের বিরুদ্ধে চরম দমন চালানোই বাংলাদেশের অবনতির মূল কারণ। বিক্ষোভে বাধা, রাস্তা আটকে দিচ্ছে পুলিশ। এরপর নির্বিচারে রাবার বুলেট, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছে, জলকামান ব্যবহার করছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা হাতুড়ি, লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের আক্রমণ করছে।

এ পরিস্থিতি তুলে ধরে সিভিকাসের জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন,’ এই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের পাশে দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে দমনমূলক পন্থা থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জানানো উচিৎ। বিশ্বনেতাদের কারাবন্দি সব বিরোধীদলীয় নেতার মুক্তি চাওয়া উচিৎ।’

সিভিকাসের এই প্রতিবেদনে আরও ৬টি দেশে নাগরিক অধিকার পরিস্থিতির অবনতি তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো- বসনিয়া-হারজেগোভিনা (বাঁধা প্রাপ্ত), জার্মানি (সংকুচিত), কিরগিজস্তান (রিপ্রেসড), সেনেগাল (রিপ্রেসড), শ্রীলঙ্কা (রিপ্রেসড) এবং ভেনেজুয়েলা (ক্লোজড)।