ফোন ধরেন না, দেখা করেন না যে উপাচার্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক মো. নূরুল আলম সাংবাদিকদের ফোন ধরেন না। প্রয়োজনের সময় তাকে কল দেওয়া হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য কার্যালয়ে গেলেও দেখা মেলা ভার।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জবাবদিহিতার উর্ধ্বে থাকতে চান বলেই উপাচার্য গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। যেটি মূলত, অগণতান্ত্রিকতা ও স্বৈরাচারী আচরণের বহিঃপ্রকাশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী কর্মকর্তা। নিয়ম অনুযায়ী তাকে সবসময় ক্যাম্পাসে থাকতে হয়। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যেকোনো সময়ই ক্যাম্পাসে গুরুতর ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু উপাচার্য সকাল থেকে সন্ধ্যা কখনোই কল দেওয়া হলে রিসিভ করেন না।

সাংবাদিকরা বলছেন, ক্যাম্পাসে গুরুতর কোনো ঘটনা ঘটলে উপাচার্যের পদক্ষেপ বা পরিকল্পনা সম্পর্কে জানার প্রয়োজন হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মন্তব্য না পাওয়া গেলে সেখানে একটা ভুল বোঝাবুঝিরও সুযোগ থেকে যায়। প্রো-ভিসি , ট্রেজারার কিংবা রেজিস্ট্রারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্য কর্মকর্তারাও বক্তব্য দিতে চান না, তারা চান বক্তব্যটা উপাচার্যের কাছ থেকেই আসুক। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়তে হয়।

সাংবাদিকরা বলছেন, উপাচার্যকে ফোন দিয়ে বক্তব্য পাওয়া গেলে জটিলতা কমে। আগের উপাচার্যদের থেকেও এভাবে বক্তব্য নেওয়া হতো। তবে বর্তমান উপাচার্য কখনো সাংবাদিকদের কল ধরেন না।

তারা বলছেন, শুধু কল দিয়ে বক্তব্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নয়, যেকোনো তথ্য জানতে হলেও বেগ পেতে হয়। রেজিস্ট্রার অফিস কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য যেকোনো অফিসে কোনো তথ্য জানতে গেলে, হয় তথ্য অধিকার আইন কিংবা উপাচার্যের অনুমতির কথা বলা হয়। তথ্য অধিকার আইন মেনে আবেদন করলেও তথ্য পাওয়া যায় না।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিব জামান বলেন, ‌‘প্রয়োজনের সময় ভিসিকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেন না। মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা ও সবাইকে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাংবাদিকদের সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘দরকারি সময়ে ফোন না ধরলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এতে সংবাদে তার মতামত নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশীজনের কাছে তথ্য চাইলে অনেকে সরাসরি ভিসির কাছ থেকে জানতে বলেন, কিন্তু তথ্য সংগ্রহের জন্য যখন ওনাকে ফোন দেওয়া হয় তখন তিনি ফোন ধরেন না, এটা দুঃখজনক’।

হাসিব জামান বলেন, “ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। তিনি সবসময় প্রশ্নের উর্ধ্বে থাকতে চান। এড়িয়ে চলেন গণমাধ্যমকে। এটা কি প্রধান নির্বাহী হওয়ায় পাওয়ার প্র্যাক্টিস নাকি মানুষের মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ভয় পাওয়া সে প্রশ্ন থেকে যায়’।

প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন গেল দুই মাস ধরে উপাচার্যের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করেছেন। বারবার ফোন দেওয়া হলেও উপাচার্য রিসিভ করেননি। কার্যালয়ে গিয়েও দেখা করার সুযোগ মেলেনি। অবশেষে কয়েকদিন আগে একবার দেখা করতে পারেন তিনি।

মামুন বলেন, ‘ভিসিকে আমি গত দুই মাসের বেশি মোবাইল ফোন কিংবা টেলিফোনে যোগাযোগ করে পাইনি। সরাসরি দেখা করতে গেলেও সাক্ষাৎ মেলে না। দেখা যায়, পাঁচ দিন গেলে একদিন দেখা করার সুযোগ হয়। মিডয়াকে ফেস করতে উনি আসলে ভায় পান কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন’।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক মো. শামছুল আলম সেলিম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে ভিসির উচিত সাংবাদিকদের কল রিসিভ করা। হয়তো তিনি ব্যস্ত থাকেন এজন্য রিসিভ করতে পারেন না। তবে উচিত ফ্রি হলে কল ব্যাক করা। সাংবাদিকরা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থেই তথ্য জানার জন্য কল দেন, সেহেতু উপাচার্যের উচিত মোবাইল ফোনের যোগাযোগের এবং তার কার্যালয়ে তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।’