'পাতানো নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করতে’ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ইসির নিষেধাজ্ঞা

আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন( ইসি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ নিয়ে কাজ করতে শুরু করেছে। ভোটগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনবিরোধী যেকোনো ধরনের সভা-সমাবেশের অনুমতি না দিতে মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ইসির এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

তবে বিএনপিকে ছাড়া হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন সিদ্ধান্তকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বরখেলাপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বড় একটি অংশ এই নির্বাচন বর্জন করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি পাতানো নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সেটি নির্বিঘ্ন করতেই ইসি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “তারা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করার চেষ্টা করছে। সভা-সমাবেশ-বাক স্বাথীনতা এগুলো মৌলিক অধিকার; যেগুলো কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত করার যায় না। এখানে জনস্বার্থে হলে হতো, কিন্তু পাতানো নির্বাচন হবে সেটার জন্য করা হচ্ছে। যেটা আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়।

তিনি বলেন, এর পরিণতি হবে অমঙ্গলকর। এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিষ্টাচার বহির্ভূত। এগুলো রাজনীতিবিদরা করতে পারে, কিন্তু এমন পেশাজীবীদের কাছ থেকে এ ধরণের নির্দেশনা আশা করা যায় না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কমিশন এ ধরনের চিঠি দিয়েছে জেনে আমরা বিস্মিত হয়েছি। যারা নির্বাচনে অংশ নেবে না তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করার জন্য এটি একটি পদক্ষেপ। নির্বাচনবিরোধী কার্যকলাপ কী তা কে সংজ্ঞায়িত করে? প্রত্যেকেরই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বর্জন এবং নির্বাচনের পক্ষে বা বিপক্ষে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে। আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন তাদের চিঠি প্রত্যাহার করবে।

এদিকে, ইসির দেওয়া নির্দেশনা মানা হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। ইসির কোনো নির্দেশনাতেই ‘সরকার পতনের’ আন্দোলন থামবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বুধবার সকালে দলটির ডাকা ৩৬ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিনের শুরুতে নটরডেম কলেজের সামনে ১৫/২০ জন নেতাকর্মী নিয়ে ‘ঝটিকা’ মিছিলে দেখা যায় রিজভীকে। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আন্দোলন নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি।

ইসি এবং সরকারকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, এই সব নির্দেশনা জারি করে কোনো লাভ হবে না, কোনো পরিপত্র জারি করে জনগণের আন্দোলন দমানো যাবে না। অবৈধ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঠেকানো যাবে না।

গতকাল মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে ইসি বলেছে, আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে যারা সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা প্রচারণা শুরু করবেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং জনগণকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত করতে পারে এমন সমাবেশ এবং অন্যান্য পাবলিক ইভেন্ট করা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে বিরত রাখতে হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এ ব্যবস্থা বহাল রাখতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা থেকে এই চিঠি পাঠানো হয়। আগের তিনটি নির্বাচনের আগে কমিশন এ ধরনের কোনো চিঠি পাঠায়নি। ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলেও ২০১৪ সালে বিএনপিসহ অন্যান্য প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে।

ইসি কেন এমন চিঠি দিয়েছে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কমিশন এ ধরনের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে। বিরোধীদের কর্মসূচির সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠির কোনো সম্পর্ক নেই। বিগত নির্বাচনের সময় ইসি এ ধরনের চিঠি পাঠিয়েছিল কি না সে বিষয়ে তিনি জানেন না।