বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ এখনো সম্ভব!

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রেন চলতে শুরু করেছে। বিএনপিকে ছাড়াই চলছে ট্রেন, শুধু বিএনপি না, এতে নেই আরও বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। নির্বাচনী কার্যক্রমের বেশ কিছু অংশ সম্পন্ন হলেও এখনও ঘুরে ফিরে প্রশ্ন বিএনপির আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার কোন সুযোগই কি নেই।? ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিল পর্ব শেষ হয়েছে, যাচাই-বাছাই হয়েছে এখন চলছে  মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া ব্যক্তিদের আপিলের শুনানি, আপিলে যাদেরটা বাদ পড়ছে তারা যাচ্ছেন আদালতে।

ঘোষিত তফসিলের কর্মবৃত্তান্ত অনুযায়ী আর কারো নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।  কিন্তু মোটেই কি নেই।? অনেকেই মনে করেন সে সুযোগ এখনো পুরোপুরিই রয়েছে।  ঘোষিত তফসিলের সময় বর্ধিতকরণের মাধ্যমে প্রার্থীতার সুযোগ তৈরি করা যায়। এটা সাংবিধানিক কোন বিষয় নয়, একেবারেই ঘোষণার বিষয়। তফসিলে বর্ণিত কার্যক্রমের সময়সীমা বৃদ্ধি করলে অধিকসংখ্যক প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ সুযোগটি ঘোষিত তফসিলেই রাখা হয়েছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণের তারিখ হচ্ছে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী ভোট গ্রহণের এ সময় আরও ২০/২১ দিন বাড়ানো সম্ভব। বর্তমান সংসদের মেয়াদ বিবেচনায় ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট গ্রহণ করতে হবে।

সুতরাং বিএনপি যদি নির্বাচন করতে চায় সে সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে সংবিধান কোন বাধা নয়, আইনও বাধা নয়, আইনের যে সংশোধন তা রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমেই সম্ভব। বিএনপির নির্বাচনে আসার সুযোগের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, ’বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় তাহলে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। যেহেতু মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব তাই এই বিষয়ে নীরিক্ষা করার সুযোগ রয়েছে। ’

নির্বাচনের যে কার্যক্রম এ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়েছে তা অক্ষুণ্ন রেখেই বিএনপিকে নির্বাচনে আনা সম্ভব।  এ জন্য দরকার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।  দু’রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ একমত হলে আইন আর সংবিধান বাধা হবে না। ঘোষিত কার্যক্রম অনুযায়ী ইসির আপিল শুনানি শেষে যদি মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য একটি সম্পূরক ঘোষণায় সময় বাড়ানো হয় তাহলে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি (বিএনপিসহ) তারা ওই সময়ের মধ্যে মনোননয়নপত্র দাখিল করবেন।  (যাদের মনোনয়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, বৈধ/অবৈধ/ফিরে পাওয়া, তা চূড়ান্ত হিসেবে থাকবে)। সম্পূরক তফসিলে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন তাদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রত্যাহার কার্যক্রম সম্পন্ন করলেই নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম একই মাত্রায় বা স্তরে চলে আসবে।  ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ।  আর ৭ জানুয়ারি ভোট। এই কার্যক্রমের মধ্যকার সময়সীমার তফাৎ অক্ষুণ্ন রেখেই সংবিধান বর্ণিত সময়ের মধ্যে ভোট হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১৮ ডিসেম্বর থেকে নতুন করে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করবেন রিটার্নিং অফিসার।  এ সময়সীমা ৩/৪ দিন দিলেই যথেষ্ট। অর্থাৎ ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র গ্রহণ।  ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই, ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর আপিলের শুনানি, ৬ জানুয়ারি প্রত্যাহারের শেষ দিন ( মূল তফসিল ও সম্প্রসারিত তফসিলের সব প্রার্থী) ৭ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ আর ভোট গ্রহণ ২৭ জানুয়ারি। এতে কোন কার্যক্রমেই সময়ের হেরফের হয় না।  এ ধরণের কার্যক্রমের ফলে কারও অধিকার সংকুচিত বা ক্ষুন্ন হয় না বরং অধিকার সম্প্রসারিত হয়, সবচে’ বড় কথা নির্বাচনটা প্রকৃত অর্থেই অংশগ্রহণমূলক হবে।

বাংলাদেশ যেমন রাজনৈতিক বিরোধ- বিসম্বাদের দেশ, তেমনি রাজনৈতিক ঐকমত্যেরও দেশ। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে সংবিধানও বাধা হয় না, তা দেখা গেছে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্রপতি হওয়া এবং পরে আবার প্রধান বিচারপতি পদে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে। পুরো বিষয়টি সম্পন্ন হওয়ার পর আইনগত ভিত্তি দেয়া হয়েছিল। সুতরাং এটা ষ্পষ্ট বিএনপিকে নির্বাচনে নেয়ার ক্ষেত্রে আইন আর সাংবিধানিক কোন বাধা নেই। রাজনৈতিক ঐকমত্য হলেই তা সম্ভব।   এখন প্রশ্ন হলো বিএনপি কি নির্বাচনের পথে এগিয়ে আসবে? নির্বাচনী ট্রেনকে কী অধিক সংখ্যক যাত্রী নেয়ার জন্য থামানো হবে? এ প্রশ্নের উত্তর সরকারের কাছে নয়, নির্বাচনী ট্রেনের চালক ইসির কাছেই আছে।