জেল থেকে বেরিয়েই যেভাবে নৌকায় উঠলেন শাজাহান ওমর

জেল থেকে বেরিয়েই যেভাবে নৌকায় উঠলেন শাজাহান ওমর

অবশেষে গুঞ্জন সত্যি হলো। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম নির্বাচনের আগে নিজের দল ছেড়ে নৌকার পাল ধরলেন। ঘোষণা দিয়েছেন ঝালকাঠি-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়াই করার।

১৯৯১ সাল থেকে বিএনপির হয়ে চারটি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া তিনবারের সাবেক এই সংসদ সদস্য মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন বৃহস্পতিবার এই চমক দেখান। শাহজাহান ওমরের ঘোষণার ঘণ্টাখানেক পর নির্বাচন বিএনপি তাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করে।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় ৫ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় এই নেতাকে। বুধবার (২৯ নভেম্বর) হঠাৎ করে জামিন পেয়ে যাওয়ার পরই তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে গুঞ্জন ছড়ায়। তিনি নিজেও তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচনে যাওয়ার আভাস দেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জামিন পাওয়ার পর সন্ধ্যায় তিনি মুক্তি পান। যদিও ২৮ অক্টোবরের সেই ঘটনায় গ্রেফতার বিএনপির নেতাদের কারোরই জামিন মেলেনি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারে নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা মনোনয়নের টিকিট দেখান শাহজাহান ওমর।

এরপর তিনি জানান, বিএনপি ছেড়ে দিয়েছেন। বছর দেড়েক আগে তিনি অব্যাহতিপত্রও পাঠিয়েছিলেন দলের শীর্ষ নেতার কাছে। নৌকার মনোনয়ন পাওয়ার পর শাহজাহান ওমর অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার সক্ষমতা ও যোগ্যতা ছিল বলেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে জামাদান প্রক্রিয়া শেষ করেন।

শাহজাহান ওমর বলেন, বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে যাচ্ছে না, বিকল্প হিসেবে তিনি ভোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নতুন দল তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমকে তাচ্ছিল্য করে বলেন, এগুলো কোনো দলের মধ্যে পড়ে না। সবকিছু বিবেচনা করেই তিনি নৌকার মাঝি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শাহজাহান ওমর বলেন, গত ১৭ বছর ধরে এলাকার কোনো কাজ করতে পারিনি। এলাকাবাসীর কাছে অনেক দায়বদ্ধতা আছে, সেই জায়গা থেকেই নির্বাচনে যাওয়া। আমি নির্বাচনে যাচ্ছি, আওয়ামী লীগ যখন নৌকায় মনোনয়নের প্রস্তাব করছে, সেখানে আর প্রশ্ন কী? আমি স্বেচ্ছায় বিএনপি থেকে পদত্যাগ করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ দেখা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেখা হতেই পারে। সবার কাছে আমার একসেস আছে।

গত রোববার আওয়ামী লীগ মনোনয়নের যে তালিকা ঘোষণা করে তাতে ঝালকাঠি-১ আসন দেওয়া হয়েছিল তিনবারের সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনকে। বৃস্পতিবার তার পরিবর্তে দেওয়া হলো ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের আবদুল কুদ্দুসকে হারিয়ে প্রথমবার সংসদে আসেন শাহজাহান ওমর। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে আবার জেতেন, তবে ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কাছে হেরে যান অল্প ভোটে।

২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির মঞ্জুকে হারিয়ে তিনি আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। শুধু ২০০৮ সালের নির্বাচনে শাহজাহান ওমরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এরপর ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ফের ধানের শীষ পান তিনি।

তিনি আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালেই বিচারপতিদের অবসরের বয়স সীমা দুই বছর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় আইনমন্ত্রী ছিলেন মওদুদ আহমদ।

উল্লেখ্য, গত ১৬ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা‘ শীর্ষক এক সেমিনারে শাহজাহান ওমরের বক্তব্য ভাইরাল হয়। সেদিন তিনি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আমাদের জন্য অবতার হয়ে এসেছেন। তার তো আমাদের আরো সাহস দেওয়া দরকার, বাবারে তুই আমাদের বাঁচা, রক্ষা কর। পিটার হাস- বাবা ভগবান আসালামু আলাইকুম।

এদিকে শাহজাহান ওমর ছাড়াও বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।