পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত  ছাত্রদল নেতা জনির ছেলে নহর

২০১৫ সালে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ছাত্রদল নেতা জনির ছেলে নহর।

সাত বছরের শান্ত ও হাসিখুশি শিশু নাদিভউজ্জামান নহর। নাম নহর (অর্থ ঝর্ণা) হলেও নহর বা ঝর্ণার মতো ওর জীবন চঞ্চল বা আনন্দময় নয়। এখনো জীবনকে সে শেখেনি। নহরের চাচার সাথে কথা বলে জানা গেল ও এবার ক্লাস টু তে পড়ছে। সর্বশেষ পরীক্ষায় প্রথমও হয়েছে। প্রথম হলে যেকোন সন্তানের জন্য তার বাবা ‌ ‘গিফট’ নিয়ে আসে, কোলে তুলে নিয়ে চুমো দেয়। বলে, বাবা অনেক বড় হতে হবে। বাবার এমন স্নেহ -ভালোবাসা নহরের ভাগ্যে নেই। 

জন্মের আগে থেকেই ক্রসফায়ারের ছোবল সে বয়ে বেড়াচ্ছে। ওর মায়েরও তো অনেক কষ্ট। মাত্র ২৫ বছর বয়সে সাদা-ফ্যাকাশে হয়েছে জীবন। স্বামীকে হারিয়ে অথই সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। 

নহরের বাবা নুরুজ্জামান জনি (৩০), ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে  ক্রসফায়ারে নিহত হেন। খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন  নুরুজ্জামান জনি । জনির পরিবারের সদস্যদের ভাষ্যমতে, গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আটক ছোট ভাই মনিরুজ্জামান হিরার সাথে দেখা করতে ২০ জানুয়ারি ( সোমবার) দুপুরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়েছিলেন জনি। এ সময় তার সঙ্গে আরো দুজন ছিলেন। বেলা ১টার দিকে ফোনে জনির সাথে পরিবারের শেষ কথা হয়। 

পুলিশের দেওয়া গাড়ি পোড়ানো মামলা বাদে জনির নামে অন্য কোনো মামলা ছিল না। জনিকে সাদা পোশাকের পুলিশ ওইদিন ধরে নিয়ে যায়। আর মঙ্গলবার তাকে বন্দুকযুদ্ধের নামে গুলি করে হত্যা করা হয়। জনিকে ক্রসফায়ারের সময়ে জনির স্ত্রী মনীষা পারভিন ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। 

তখনকার মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমানের বক্তব্য ছিল, ভোররাতে খিলগাঁওয়ের জোড়াপুকুর মাঠে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় নুরুজ্জামান জনি নামে এক ছাত্রদল নেতা। তিনি গত শনিবার রাতে মৎস্য ভবনের সামনে পুলিশের গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন।

নুরুজ্জামান জনিরা দুই ভাই ও এক বোন ছিলেন। ছাত্রদলের পরিশ্রমী কর্মী ছিলেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে ছাত্রদল করতেন। এরপর খিলগাঁও থানার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। জনির ছোট ভাই মনির উজ্জামান হিরা বর্তমানে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক। জনির মা মরিয়ম বেগম ছেলে হারানোর বেদনা নিয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। ২০১৯ সালে স্ট্রোক করেন। জনির বাবা ইয়াকুব আলী ব্যবসা ও রিক্সার গ্যারেজ দেখাশোনা করেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তাদের রিক্সার গ্যারেজটি  কয়েক বছর আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বন্ধ করে দেয়। ফলে দুটো পরিবার আর্থিক টানাপোড়েনে পড়ে। 

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বিএনপির লাগাতার অবরোধের মধ্যে ১৮ জানুয়ারি শনিবার রাতে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ও মৎস্য ভবনের মাঝামাঝি স্থানে পুলিশের একটি বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে অজ্ঞাতরা। এতে এক কর্মকর্তাসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। উক্ত ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জনিকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়। একই ঘটনায়  মতিঝিল এজিবি কলোনির কাঁচাবাজার এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ইমরুল কায়েস (৩৮) নামে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতা নিহত হন। ইমরুল নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।