ভারতে টানেলে ৪১ শ্রমিক আটকা: খননকাজে ব্যবহৃত যন্ত্র বিকল হওয়ায় উদ্ধারকাজ বন্ধ

ভারতের উত্তরাঞ্চলে একটি ধসে পড়া টানেলে দুই সপ্তাহ ধরে আটকে থাকা ৪১ জন নির্মাণশ্রমিকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা শনিবার (২৫ নভেম্বর) ফের বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

একদিন আগে নুড়ি পাথর ও ধাতুর ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দিয়ে খনন করার সময় ড্রিলিং মেশিনটি ভেঙে যায়। এরপর হাত দিয়ে ধ্বংসাবশেষ অপসারণের কাজ করছিলেন উদ্ধারকারীরা। কিন্তু শনিবার অভিযানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

উত্তরাখণ্ড রাজ্যের দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দলকে সহায়তাকারী আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স বলেছেন, কবে আবার খনন কাজ শুরু করা যাবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যন্ত্রটি ভেঙে গেছে। এটা আর মেরামত করা সম্ভব নয়।’

গত ১২ নভেম্বর ভূমিধসে ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলের একটি অংশ প্রবেশদ্বার থেকে প্রায় ২০০ মিটার (৬৫০ ফুট) ধসে পড়ে শ্রমিকরা টানেলে আটকা পড়েছেন।

এলাকাটি পাথুরে হওয়ায় ড্রিলিং মেশিন চালানো চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। এর আগে দুবার মেশিন ভেঙে যাওয়ায় উদ্ধারকারী দল আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করতে পারেনি।

১২ মিটার (৪০ ফুট) ধ্বংসাবশেষের প্রায় ২ মিটার (৬ দশমিক ৫ ফুট) ড্রিল করার পরে মেশিনটি বন্ধ হয়ে যায়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা দেবেন্দ্র পাটওয়াল জানান, উদ্ধারকারীরা খনন করা চ্যানেলে পাইপ ঢুকিয়েছে এবং একটি প্যাসেজওয়ে হিসেবে ব্যবহার করার জন্য ঢালাই করেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৬ মিটার (১৫১ ফুট) পাইপ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, শনিবার দুর্ঘটনাস্থলে খাড়াভাবে খননের জন্য ব্যবহৃত একটি নতুন ড্রিলিং মেশিন আনা হয়েছে।

আটকে পড়া লোকদের কাছে পৌঁছানোর বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে খাড়াভাবে খনন করা হচ্ছে এবং উদ্ধারকারীরা পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে ফেলেছে। উদ্ধারকারী দলগুলো আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ১০৩ মিটার (৩৩৮ ফুট) গভীর পর্যন্ত খনন করতে হবে।

কর্তৃপক্ষ আটকে পড়া শ্রমিকদের ৬ ইঞ্চি (১৫-সেন্টিমিটার) পাইপের মাধ্যমে চাল ও মসুর ডাল দিয়ে তৈরি গরম খাবার সরবরাহ করেছে। এর আগে তারা একটি সংকীর্ণ পাইপের মাধ্যমে পাঠানো শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে ছিলেন।

একটি পৃথক পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞসহ এক ডজনেরও বেশি চিকিৎসক দুর্ঘটনাস্থলে তাদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করছেন।

আটকে পড়া শ্রমিকদের বেশিরভাগই সারাদেশ থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিক। তাদের অনেকের পরিবার দুর্ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পটি ফেডারেল সরকারের একটি ফ্ল্যাগশিপ উদ্যোগ। এটি হিমালয়ের ভঙ্গুর অবস্থাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে, যেখানে ধ্বংসাবশেষের উপরে বেশ কয়েকটি শহর তৈরি করা হয়েছে।

বিপুল সংখ্যক তীর্থযাত্রী ও পর্যটক উত্তরাখণ্ডের অনেক হিন্দু মন্দির পরিদর্শন করে। ভবন ও রাস্তাঘাট নির্মাণ অব্যাহত থাকার কারণে বছরের পর বছর এই সংখ্যা বাড়ছে।

ইউএনবি